সাংবাদিকের লম্বা প্রশ্ন শুনে ধরলেন ঘুমের ভান, নাকও ডাকলেন
মাইক্রোফোনের সামনে থাকা লোকের নামটা যখন জোসে মরিনিও, তখন সংবাদ সম্মেলনে বিচিত্র কিছু না ঘটাই বরং অস্বাভাবিক। ক্যারিয়ারজুড়েই সংবাদমাধ্যমে নানা বেফাঁস মন্তব্য করে শিরোনাম হয়েছেন, তুরস্কের ক্লাব ফেনেরবাচের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যেন স্বভাবটা আরও বেয়াড়া হয়ে উঠেছে ৬২ বছর বয়সী পর্তুগিজ কোচের। তুরস্কের ফুটবলে এক রেফারিং নিয়ে ‘অনিয়ম-দুর্নীতি’র ব্যাপারে কথা বলেই প্রতিনিয়ত খবরের শিরোনাম হচ্ছেন মরিনিও। কখনো রেফারির, কখনো লিগ কর্তৃপক্ষের – তা তাঁর দল জিতুক বা হারুক! কদিন আগে তো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী গালাতাসারাইয়ের বিপক্ষে ম্যাচে রেফারির এক সিদ্ধান্তের পর গালা-র খেলোয়াড়েরা ‘বানরের মতো লাফাচ্ছিলেন’ বলে বর্ণবাদের মতো অভিযোগেও অভিযুক্ত হয়েছিলেন মরিনিও। যেখানে তাঁর ক্যারিয়ারজুড়ে তাঁকে দেখে যে কারওই মনে হবে, বর্ণবাদবিরোধিতার বিজ্ঞাপন হওয়ার যোগ্য লোকদের একজন তিনি!তা সেই মরিনিও এবার শিরোনামে এলেন কী করে? ঘুমিয়ে! মানে, ঘুমের ভান ধরে আর কী! সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নটা এত লম্বা ছিল যে, তাতে বিরক্তি প্রকাশ করতে এক পর্যায়ে ঘুমের ভান ধরেন মরিনিও। সংবাদমাধ্যম ইএসপিএন লিখেছে, সে সময়ে নাক ডাকার আওয়াজও করেছেন ফেনেরবাচে কোচ। গতকাল ইউরোপা লিগের শেষ ষোলোর প্রথম লেগে নিজেদের মাঠেই স্কটল্যান্ডের ক্লাব রেঞ্জার্সের কাছে ৩-১ গোলে হেরে গেছে ফেনেরবাচে। ম্যাচের পর তুরস্কের এক সাংবাদিক সংবাদ সম্মেলনে মরিনিওর ট্যাকটিকস এবং ম্যাচে খেলোয়াড় বদল নিয়ে প্রশ্ন করেন। সম্প্রতি কোণ ম্যাচে কজন সেন্টারব্যাক খেলিয়েছেন সেসবের ফিরিস্তি টেনে ধরে গতকালের ম্যাচের কৌশলের ব্যাখ্যা জানতে চাইছিলেন মরিনিওর কাছে। কিন্তু এত উদাহরণ টানতে টানতে এমন অবস্থা হলো যে, শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রশ্নই হলো ৫০ সেকেন্ড সময় ধরে!
এত লম্বা প্রশ্ন শুনতে তো আর অভ্যস্ত নন কোচ-খেলোয়াড়েরা! তা সাক্ষাৎকারে যদিও কিছু শুনে থাকেন, সংবাদ সম্মেলনে এত লম্বা প্রশ্ন সাধারণত হয় না। তো গতকাল তুরস্কের ওই সাংবাদিকের প্রশ্ন যখন শেষই হচ্ছিল না, এক পর্যায়ে চোখেমুখে বিরক্তির ভাব ফুটিয়ে তোলা মরিনিও কিছুক্ষণ দুই হাত জোড় করে ‘বালিশ’ বানিয়ে তাতে ঘুমিয়ে যাওয়ার ভঙ্গি করলেন, এক পর্যায়ে নাক ডাকার আওয়াজও তোলেন।
নিজ ভাষায় তুরস্কের ওই সাংবাদিকের প্রশ্নের পর ফেনেরবাচের প্রেস অফিসার যখন মরিনিওর জন্য প্রশ্নটা ইংরেজিতে অনুবাদ করে দিচ্ছিলেন, লম্বা প্রশ্ন শুনতে শুনতে বিরক্ত মরিনিও এক পর্যায়ে বলে বসেন, ‘ওহ! আমার মস্তিষ্কের জন্য খুব চাপ হয়ে যাচ্ছে এটা (প্রশ্ন)। আমি ক্লান্ত, ভাই! ৯০ মিনিটের পর…এসব শুনতে আসিনি! এসব শোনার মতো শক্তি আর নেই।’
এরপর সাংবাদিকের অনেক খেটেখুটে তথ্য বের করে করা প্রশ্নের ‘উত্তর’ মরিনিও দিয়েছেন বটে! তবে সেটাকে উত্তর না বলে ‘কিছু একটা বলে দেওয়া’ই ভালো। কী বলেছেন মরিনিও, ‘জ্বী, জ্বী…আমরা প্রতি ম্যাচেই খেলোয়াড় বদলাই!’
ম্যাচে এমন হারের পথে তাঁর দল রেঞ্জার্সের তুলনায় ‘প্রত্যেকটা দিকেই খারাপ’ খেলেছে স্বীকার করে মরিনিও বলেছেন, এই ম্যাচের একমাত্র ইতিবাচক দিক তাঁর চোখে এটিই যে, ‘ব্যবধানটা আরও বড় হয়নি।’ তবে ম্যাচের পর রেঞ্জার্সের উদ্যাপনে বাড়াবাড়ি নিয়েও দুকথা বলতে ভুলে যাননি। প্রতিপক্ষের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘ওদের শুধু এটাই বলি যে, উদ্যাপনে এখনই এত বাড়াবাড়ি কোরো না। কারণ দ্বিতীয় লেগ এখনো বাকি। দ্বিতীয় ম্যাচটার পর ওরা যদি উদ্যাপনের অবস্থায় থাকে, আমিও ওদের অভিবাদন জানাব। আপাতত শান্ত থাকুন, কারণ এখনো সব শেষ হয়ে যায়নি।’
রেঞ্জার্সের মাঠে দ্বিতীয় লেগ আগামী ১৩ মার্চ।
Countdown Timer
00:01
Post a Comment