Top News

পেটের ভেতরে ৭ ইঞ্চি কাঁচি রেখেই সেলাই, তারপর…

 

পেটের ভেতরে ৭ ইঞ্চি কাঁচি রেখেই সেলাই, তারপর…

বরগুনার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারের সময় রোগীর পেটে সাত ইঞ্চি লম্বা ফরসেপ (কাঁচি) রেখেই সেলাই করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডা. ফারহানা মাহফুজ এবং কুয়েত প্রবাসী হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সাফিয়া পারভীনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওঠে।

অস্ত্রোপচারের সাত মাস পর ফরসেপটি অপসারণ করা হলেও বর্তমানে ওই রোগী কহিনুর বেগম (৭০) মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার বালিয়াতলী গ্রামের বাসিন্দা কহিনুর বেগম সাত মাস আগে বেড়াতে এসেছিলেন বরগুনা পৌর শহরের সোনাখালী এলাকায় মেয়ের বাড়িতে।

সেখানে হঠাৎ তীব্র পেটব্যথা শুরু হলে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বরগুনা সদর উপজেলার দক্ষিণ মনসাতলী গ্রামের মহাসড়ক সংলগ্ন বরগুনা কুয়েত প্রবাসী হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। পরীক্ষায় জরায়ুর জটিলতা ধরা পড়ে এবং ২০২৪ সালের ১৮ নভেম্বর অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা।
অপারেশনটি পরিচালনা করেন বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডা. ফারহানা মাহফুজ ও কুয়েত প্রবাসী হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সাফিয়া পারভীন। তবে অভিযোগ রয়েছে, অস্ত্রোপচারের পর রোগীর পেটের ভেতরেই ভুলক্রমে ৭ ইঞ্চি লম্বা একটি ফরসেপ রেখে সেলাই করে দেওয়া হয়।


অপারেশনের পর থেকেই ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়েন কহিনুর বেগম। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে এক্স-রে করে তার তলপেটে ধরা পড়ে একটি ধাতব বস্তু। পরে গত ১৮ জুন পুনরায় অস্ত্রোপচারে তার পেট থেকে ফরসেপটি অপসারণ করা হয়।

প্রাথমিক অস্ত্রোপচারে কহিনুর বেগমের মলদ্বার বাদ দিয়ে বিকল্প রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু সেই স্থানে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ায় বর্তমানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন ওই নারী।

এ ঘটনায় কহিনুর বেগমের পরিবার চিকিৎসকদের গাফিলতির বিচারের দাবিতে বরগুনা জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

কহিনুর বেগমের মেয়েজামাই হুমায়ুন গণমাধ্যমকে বলেন, আমার শাশুড়ি আমাদের বাড়ি বেড়াতে আসার পরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে কুয়েত প্রবাসী হাসপাতালে ডাক্তার দেখাই। সেখানে তার অপারেশন করতে বলে। আমরা অপারেশন করাই এবং চারদিন হাসপাতালে থেকে বাড়ি নিয়ে আসি। এর একদিন পরেই তিনি আবার অসুস্থ হলে তাকে আবার সেই হাসপাতালে নিয়ে যাই। এরপরে সেখানে আবার ১১ দিন তারা ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়। তাও ভালো না হওয়ায় বরিশালে ডাক্তার দেখানোর পর তার পেটের মধ্যে কাঁচি পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে কহিনুর বেগমের মেয়ে ফাহিমা বেগম বলেন, ভুল চিকিৎসার কারণে আমার মা এখন মৃত্যুশয্যায়। আমার মায়ের খাদ্যনালী কেটে ফেলতে হয়েছে। আমরা মামলা করবো। আমি ডাক্তার ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিচার চাই।

ভুল চিকিৎসার বিষয়ে কুয়েত প্রবাসী হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল হক গাজী (মন্টু) বলেন, শুনেছি ওনার পেটে ফরসেপ পাওয়া যায়। ঘটনা শুনে আমি ওই পরিবারের খোঁজ নিতে বরিশালেও গিয়েছি। যেহেতু অপারেশনটি অন্য ডাক্তার করেছেন, তাই এ বিষয়ে তিনিই ভালো বলতে পারবেন। এখানে আমার কোনো ত্রুটি নেই।

এ বিষয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডা. ফারহানা মাহফুজের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ বাংলানিউজকে বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post