হঠাৎ করে উঠে দাঁড়ালে মাথা ঘোরা খুবই সাধারণ একটি সমস্যা, যাকে ডাক্তারি ভাষায় অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন (Orthostatic Hypotension) অথবা পোশ্চারাল হাইপোটেনশন (Postural Hypotension) বলা হয়।
অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন কী?
যখন আমরা বসে বা শুয়ে থাকি, তখন মাধ্যাকর্ষণের কারণে রক্ত আমাদের শরীরের নিচের অংশে (পা এবং পেটে) জমা হয়। যখন আমরা হঠাৎ করে উঠে দাঁড়াই, তখন এই রক্ত হঠাৎ করে মস্তিষ্কে পৌঁছাতে দেরি করে, ফলে মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ সাময়িকভাবে কমে যায়।
সাধারণত আমাদের শরীর দ্রুত এর মোকাবিলা করে। রক্তনালীগুলো সংকুচিত হয় এবং হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন দ্রুত হয়, যাতে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে এবং মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত রক্ত পৌঁছায়। কিন্তু যদি এই প্রক্রিয়াটি দ্রুত বা কার্যকরভাবে না হয়, তাহলে রক্তচাপ কমে যায় এবং মাথা ঘোরা, ঝাপসা দেখা বা এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়।
মাথা ঘোরার আসল কারণসমূহ (অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশনের কারণ):
* পানিশূন্যতা (Dehydration): পর্যাপ্ত পরিমাণে জল না পান করলে বা অত্যধিক ঘাম হলে শরীরের রক্তের পরিমাণ কমে যায়, যা রক্তচাপ কমিয়ে দেয় এবং মাথা ঘোরার একটি অন্যতম কারণ।
* কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
* উচ্চ রক্তচাপের ঔষধ (যেমন ডাইউরেটিকস, আলফা-ব্লকার, বিটা-ব্লকার)।
* বিষণ্ণতার ঔষধ (Antidepressants)।
* পার্কিনসন রোগের ঔষধ।
* পুরুষদের যৌন সমস্যার ঔষধ।
* ব্যথানাশক ঔষধ (Narcotics)।
* হৃৎপিণ্ডের সমস্যা:
* অনিয়মিত হৃদস্পন্দন (Arrhythmia)।
* হার্ট ফেইলিওর।
* হার্ট অ্যাটাক।
* হার্টের ভাল্বের সমস্যা।
* অন্তঃস্রাবী গ্রন্থির সমস্যা (Endocrine Problems):
* ডায়াবেটিস (যার কারণে স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা করে)।
* রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যাওয়া (Hypoglycemia)।
* থাইরয়েড সমস্যা।
* অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির সমস্যা (Addison's disease)।
* স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা (Nervous System Disorders):
* পার্কিনসন রোগ।
* মাল্টিপল সিস্টেম অ্যাট্রফি।
* স্ট্রোক।
* পেরিপারাল নিউরোপ্যাথি।
* দীর্ঘক্ষণ বিছানায় শুয়ে থাকা: দীর্ঘ সময় ধরে বিছানায় শুয়ে থাকলে শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
* অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন: অ্যালকোহল শরীরকে পানিশূন্য করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বাধা দিতে পারে।
* রক্তস্বল্পতা (Anemia): শরীরে লোহিত রক্তকণিকার অভাব হলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়, যা মাথা ঘোরার কারণ হতে পারে।
* বয়স: বয়স বাড়ার সাথে সাথে রক্তনালীগুলো কম নমনীয় হয় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়, তাই বয়স্কদের মধ্যে অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন বেশি দেখা যায়।
* অন্যান্য কারণ:
* দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ।
* ভারী খাবার খাওয়ার পর (রক্ত পরিপাকতন্ত্রে চলে যাওয়ায়)।
* খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর।
* গরম আবহাওয়ায়।
লক্ষণসমূহ:
* মাথা ঘোরা বা হালকা লাগা।
* অজ্ঞান হয়ে যাওয়া (syncope)।
* দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া।
* বমি বমি ভাব।
* ক্লান্তি।
* বিভ্রান্তি।
* মাথাব্যথা।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন?
যদি আপনার ঘন ঘন মাথা ঘোরে, বিশেষ করে যদি আপনি অজ্ঞান হয়ে যান বা আপনার দৈনন্দিন কার্যকলাপে বাধা সৃষ্টি হয়, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত। ডাক্তার আপনার সমস্যা নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসার পরামর্শ দিতে পারবেন।
কিছু সাধারণ টিপস যা মাথা ঘোরা কমাতে সাহায্য করতে পারে:
* ধীরে ধীরে উঠুন: বসে বা শুয়ে থাকা অবস্থা থেকে হঠাৎ করে উঠে না দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে দাঁড়ান। প্রথমে উঠে বসুন, কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন, তারপর দাঁড়ান।
* পর্যাপ্ত জল পান করুন: সারাদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন।
* অ্যালকোহল কম পান করুন:
* ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন: একবারে অনেক বেশি বা ভারী খাবার না খেয়ে অল্প অল্প করে বারে বারে খান।
* কম্প্রেশন স্টকিংস ব্যবহার করুন: এগুলো পায়ের রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
* বিছানার মাথার দিকটা উঁচু রাখুন: কিছু ক্ষেত্রে এটি উপকারী হতে পারে।
* নিয়মিত ব্যায়াম করুন: এটি সামগ্রিক হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য উন্নত করে।
যেহেতু রেডিও বাংলা তাদের কমেন্টে বিস্তারিত জানাতে বলেছে, সম্ভবত তারা এই কারণগুলোর কিছু বা সবগুলোই উল্লেখ করবে।
Post a Comment