হ্যাঁ, অতিরিক্ত গরম লাগা বা তাপ অসহিষ্ণুতা (heat intolerance) বিভিন্ন রোগের লক্ষণ হতে পারে, আবার কিছু সাধারণ কারণেও এটি হতে পারে।
অতিরিক্ত গরম লাগার সম্ভাব্য কারণসমূহ
১. পরিবেশগত কারণ:
* উচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা: গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় শরীর স্বাভাবিকভাবেই বেশি গরম অনুভব করে।
* ভারী বা আঁটসাঁট পোশাক: এটি শরীরের তাপ বের হতে বাধা দেয়।
* শারীরিক পরিশ্রম: ব্যায়াম বা কায়িক শ্রমের ফলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
* পানিশূন্যতা (Dehydration): পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করলে শরীর নিজেকে ঠান্ডা রাখতে পারে না।
২. হরমোনজনিত কারণ:
* থাইরয়েড গ্রন্থির অতিরিক্ত সক্রিয়তা (Hyperthyroidism): থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত হরমোন নিঃসৃত হলে শরীরের বিপাকক্রিয়া (metabolism) বেড়ে যায়, যার ফলে সব সময় গরম লাগতে পারে, ঘাম হতে পারে, ওজন কমে যেতে পারে এবং বুক ধড়ফড় করতে পারে।
* মেনোপজ (Menopause): মহিলাদের মেনোপজের সময় "হট ফ্ল্যাশ" বা হঠাৎ গরম লাগার অনুভূতি খুব সাধারণ। এটি হরমোনের পরিবর্তনের কারণে হয়।
* গর্ভাবস্থা (Pregnancy): গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তন এবং শরীরের বিপাকক্রিয়া বৃদ্ধির কারণে মহিলাদের বেশি গরম লাগতে পারে।
৩. কিছু রোগ বা স্বাস্থ্যগত অবস্থা:
* জ্বর (Fever): যেকোনো ধরনের সংক্রমণ বা অসুস্থতার কারণে জ্বর হলে শরীর গরম লাগে। জ্বরের সাথে সাধারণত ঠান্ডা লাগা, ঘাম, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ থাকে।
* ডায়াবেটিস: বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই, তাদের অতিরিক্ত গরম লাগতে পারে। ডায়াবেটিস স্নায়ু এবং রক্তনালীকে প্রভাবিত করতে পারে, যা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা সৃষ্টি করে।
* উচ্চ রক্তচাপ (High Blood Pressure): উচ্চ রক্তচাপ কিছু ক্ষেত্রে তাপ অসহিষ্ণুতার কারণ হতে পারে।
* স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা: মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (Multiple Sclerosis - MS), পারকিনসন রোগ (Parkinson's disease) বা অন্যান্য স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা থাকলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হতে পারে।
* কিছু মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা: অতিরিক্ত মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ (Anxiety) অনুভব করার সময়ও শরীর গরম লাগতে পারে এবং ঘাম হতে পারে।
* হিট স্ট্রোক বা হিট এক্সহশন (Heat Stroke/Heat Exhaustion): তীব্র গরমে শরীরের তাপমাত্রা অত্যাধিক বেড়ে গেলে এটি একটি মারাত্মক অবস্থা। এর লক্ষণগুলো হলো: অতিরিক্ত ঘাম, দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, দ্রুত পালস রেট ইত্যাদি। এটি জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন।
* ওজন বেশি থাকা (Obesity): অতিরিক্ত ওজন শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।
* কিছু অটোইমিউন রোগ: যেমন গ্রেভস ডিজিজ (Graves' disease), রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (Rheumatoid Arthritis) ইত্যাদি।
৪. কিছু ঔষধ:
* কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস (Antidepressants), অ্যান্টিহিস্টামিনস (Antihistamines), মূত্রবর্ধক (Diuretics) এবং উচ্চ রক্তচাপের ঔষধ শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে প্রভাব ফেলতে পারে।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
যদি আপনার অতিরিক্ত গরম লাগার সাথে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো থাকে বা এটি আপনার দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে, তাহলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত:
* ঘন ঘন বা অস্বাভাবিকভাবে গরম লাগা, বিশেষ করে যখন তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে।
* অন্যান্য উপসর্গ, যেমন: ওজন হ্রাস, বুক ধড়ফড়, অতিরিক্ত ঘাম, অস্থিরতা, ক্লান্তি, ঘুমের সমস্যা।
* ঘন ঘন জ্বর আসা।
* বিভ্রান্তি, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, তীব্র মাথাব্যথা।
* যদি আপনি কোনো নতুন ঔষধ সেবন শুরু করে থাকেন এবং এরপর থেকে এই সমস্যা হচ্ছে।
* যদি আপনার ডায়াবেটিস, থাইরয়েডের সমস্যা বা অন্য কোনো দীর্ঘস্থায়ী রোগ থাকে এবং গরম লাগা বেড়ে যায়।
সাধারণত পরিবেশগত কারণে গরম লাগলে ঠান্ডা জায়গায় যাওয়া, পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং হালকা পোশাক পরা সাহায্য করে। কিন্তু যদি সমস্যাটি অস্বাভাবিক মনে হয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
Post a Comment