Top News

স্তন ক্যানসার থেকে বাঁচতে চান? জেনে নিন কার্যকর উপায়

 স্তন ক্যানসার থেকে বাঁচতে চান? জেনে নিন কার্যকর উপায়



ব্রেস্ট ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায় আছে, যা মেনে চললে ঝুঁকি অনেকটাই কমানো যায়। যদিও কিছু কারণ (যেমন বয়স বা পারিবারিক ইতিহাস) আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে, জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা আপনাকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করবে।

১. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন

 * স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন: অতিরিক্ত ওজন, বিশেষ করে মেনোপজের পর, স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা খুব জরুরি। নিয়মিত ব্যায়াম এবং সুষম খাদ্য এক্ষেত্রে সহায়ক।

 * নিয়মিত ব্যায়াম করুন: প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট মাঝারি ধরনের শারীরিক কার্যকলাপ যেমন দ্রুত হাঁটা, জগিং, সাঁতার বা সাইক্লিং করলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।

 * অ্যালকোহল পরিহার করুন বা সীমিত করুন: অতিরিক্ত মদ্যপান স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই মদ্যপান সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করা বা এর পরিমাণ সীমিত রাখা উচিত।

 * ধূমপান ত্যাগ করুন: ধূমপান শুধু ফুসফুসের ক্যান্সার নয়, স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ায়।

 * সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান: যারা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান, তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কম থাকে। যত বেশি সময় বুকের দুধ খাওয়ানো হয়, সুরক্ষামূলক প্রভাব তত বেশি।

 * হরমোন থেরাপি সীমিত করুন: পোস্টমেনোপজাল হরমোন থেরাপি (কম্বিনেশন হরমোন থেরাপি) স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এই বিষয়ে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন এবং বিকল্প চিকিৎসা আছে কিনা জেনে নিন।

 * জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল ব্যবহারে সতর্কতা: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কিছুটা বাড়াতে পারে, তবে পিল বন্ধ করলে এই ঝুঁকি কমে যায়। এই বিষয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত, বিশেষ করে যদি আপনার অন্য কোনো ঝুঁকির কারণ থাকে।

২. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

 * ফল ও শাকসবজি: প্রচুর পরিমাণে তাজা ফল, শাকসবজি এবং আঁশযুক্ত খাবার খান। এগুলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটোকেমিকেল সমৃদ্ধ, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। বিভিন্ন রঙের ফল ও সবজি আপনার খাদ্যতালিকায় রাখুন।

 * অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার: হলুদ (কারকিউমিন), গ্রিন টি, তিসি, রসুন, পেঁয়াজ, এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (স্যামন মাছ, ফ্ল্যাক্স সিড) ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধে সহায়ক হতে পারে।

 * চর্বি ও চিনি কমিয়ে দিন: অতিরিক্ত চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্ট ফুড এবং চিনিযুক্ত পানীয় পরিহার করুন।

 * পর্যাপ্ত জল পান করুন: সারাদিনে অন্তত ৩-৪ লিটার জল পান করুন।

৩. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা

 * স্তন স্ব-পরীক্ষা (Self-Examination): প্রতি মাসে একবার আপনার স্তন পরীক্ষা করুন, যাতে কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন যেমন পিণ্ড বা চাকা, স্তনের আকার বা রঙের পরিবর্তন, নিপল থেকে অস্বাভাবিক নিঃসরণ ইত্যাদি সহজে ধরা পড়ে।

 * ক্লিনিকাল স্তন পরীক্ষা (Clinical Breast Exam): আপনার ডাক্তারের কাছে নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করান, বিশেষ করে যদি আপনার কোনো ঝুঁকির কারণ থাকে।

 * ম্যামোগ্রাম (Mammogram): ৩৫ বছর বা তার বেশি বয়সী মহিলাদের, এবং যাদের স্তন ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস আছে, তাদের ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ম্যামোগ্রাম করানো উচিত। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার শনাক্ত হলে সফল চিকিৎসার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।

 * ঝুঁকি মূল্যায়ন: আপনার বয়স, পারিবারিক ইতিহাস এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য অবস্থার উপর ভিত্তি করে আপনার স্তন ক্যান্সারের ব্যক্তিগত ঝুঁকি সম্পর্কে ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।

৪. অন্যান্য বিষয়

 * বংশগত কারণ জানা: আপনার পরিবারের কারোর স্তন বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার আছে কিনা, তা জেনে নিন। যদি থাকে, তাহলে আপনার ঝুঁকি বেশি হতে পারে এবং এক্ষেত্রে জেনেটিক কাউন্সেলিং বা স্ক্রিনিংয়ের প্রয়োজন হতে পারে।

 * মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ: মানসিক চাপ কমানোর জন্য যোগব্যায়াম, ধ্যান বা অন্যান্য রিলাক্সেশন কৌশল অনুশীলন করুন।

মনে রাখবেন, কোনো একক পদ্ধতি স্তন ক্যান্সারকে পুরোপুরি প্রতিরোধ করতে পারে না, তবে এই সম্মিলিত অভ্যাসগুলো আপনার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে সাহায্য করবে। নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া এবং কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন নজরে পড়লে দ্রুত তা জানানোর মাধ্যমে প্রাথমিক সনাক্তকরণ ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়।


Countdown Timer
00:01

Post a Comment

Previous Post Next Post