Top News

নামাজের সময় খারাপ চিন্তা আসলে কি নামাজ নষ্ট হয়ে যায়?

ইসলামী শরীয়তে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। হাদিসের আলোকে বলা যায়, নামাজের সময় খারাপ চিন্তা আসার বিষয়টি শয়তানের ওয়াসওয়াসা (কুমন্ত্রণা) এবং এর কারণে নামাজ বাতিল হয় না, তবে নামাজের পরিপূর্ণ সওয়াব বা খুশু-খুজু (একাগ্রতা) নষ্ট হয়।

নামাজে শয়তানের কুমন্ত্রণা এবং এর প্রতিকার

হাদিসে এসেছে, নামাজে মনোযোগ নষ্ট করার জন্য একটি নির্দিষ্ট শয়তান রয়েছে, যার নাম খিনজিব।

হযরত উসমান ইবনে আবুল আস (রা.) বর্ণনা করেন, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, "হে আল্লাহর রাসূল! শয়তান আমার এবং আমার সালাত ও কিরাআতের মাঝে প্রতিবন্ধক হয়ে তা আমার জন্য এলোমেলো করে দেয়।" তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন,

> "ওটা এক প্রকারের শয়তান, যার নাম 'খিনজিব'। যখন তুমি তার উপস্থিতি অনুভব করবে, তখন (আউযুবিল্লাহ পড়ে) তার কবল থেকে আল্লাহর নামে আশ্রয় চেয়ে তিনবার তোমার বামদিকে থুথু নিক্ষেপ করবে।"

> — (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২২০৩)

হযরত উসমান (রা.) বলেন, "পরে আমি তা করলে আল্লাহ আমা থেকে তা দূর করে দিলেন।"

এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, নামাজে খারাপ চিন্তা বা ওয়াসওয়াসা আসা শয়তানের কাজ এবং এর থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হয়।

খুশু (একাগ্রতা) নষ্ট হওয়ার হাদিস

নামাজের মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সামনে নিজেকে পুরোপুরি সমর্পণ করা এবং এর জন্য খুশু বা একাগ্রতা অপরিহার্য। খুশু ছাড়া নামাজ হয় বটে, কিন্তু এর সওয়াব কমে যায়। এ সম্পর্কে একটি হাদিসে এসেছে:

> রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, "এমন অনেক নামাজ আদায়কারী আছে, যারা তাদের নামাজ থেকে ক্ষুধা ও ক্লান্তি ছাড়া আর কিছুই পায় না।"

> — (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩২৮৬)

এই হাদিসটি থেকে বোঝা যায় যে, যদি কোনো ব্যক্তি নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগী না হয়ে শুধু শারীরিক ইবাদত করে, তাহলে তার নামাজ হয়তো আদায় হয়ে যায়, কিন্তু সে তার ফলস্বরূপ কোনো সওয়াব পায় না।

নামাজের মনোযোগ ফিরিয়ে আনার উপায়

নামাজে মনোযোগ ধরে রাখতে এবং শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচতে হাদিসে কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে:

 * ধীরে-স্থিরভাবে নামাজ আদায় করা: দ্রুততার সাথে নামাজ আদায় করলে মনোযোগ ছুটে যায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) কাকের মতো ঠোকর মেরে নামাজ আদায় করতে নিষেধ করেছেন।

 * মৃত্যুর স্মরণ: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, "যখন তুমি নামাজে দাঁড়াও, তখন এমনভাবে নামাজ আদায় করো, যেন এটিই তোমার জীবনের শেষ নামাজ।" (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪১৬৪)

 * আল্লাহকে হাজির-নাজির জানা: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, "এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করো, যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ। আর যদি দেখতে না পাও, তবে (ভাবো) তিনি তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন।" (সহিহ বুখারী, হাদিস: ৫০; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮)

সুতরাং, যদি নামাজে খারাপ চিন্তা আসে, তাহলে হতাশ না হয়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে এবং মনোযোগ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। এতে নামাজ বাতিল হবে না, বরং আপনার এই প্রচেষ্টা আল্লাহর কাছে খুবই পছন্দনীয় হবে।


Countdown Timer
00:01

Post a Comment

Previous Post Next Post