Top News

ঘুমের সময় মুখ থেকে লালা পড়ার সাধারণ কারণগুলো:

 ঘুমের সময় মুখ থেকে লালা পড়া একটি সাধারণ ঘটনা। এর পেছনে বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে, যার মধ্যে কিছু নিরীহ এবং কিছু ক্ষেত্রে অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণও হতে পারে।

ঘুমের সময় মুখ থেকে লালা পড়ার সাধারণ কারণগুলো:

 * ঘুমের অবস্থান: এটি সবচেয়ে সাধারণ কারণ। যদি আপনি পাশ ফিরে বা উপুড় হয়ে ঘুমান, তাহলে অভিকর্ষের টানে লালা মুখ থেকে বাইরে চলে আসতে পারে। চিৎ হয়ে ঘুমালে সাধারণত এই সমস্যা কম হয়।

 * পেশী শিথিলতা: ঘুমের সময়, বিশেষ করে গভীর ঘুমে (REM ঘুম), মুখের পেশী শিথিল হয়ে যায়। এর ফলে মুখ খুলে যেতে পারে এবং লালা জমা হয়ে বেরিয়ে আসতে পারে।

 * অতিরিক্ত লালা উৎপাদন: কিছু মানুষের স্বাভাবিকভাবেই লালা বেশি উৎপাদিত হয়।

 * নাক বন্ধ থাকা (ঠান্ডা, অ্যালার্জি, সাইনাসের সমস্যা): যদি আপনার নাক বন্ধ থাকে, তাহলে আপনি ঘুমের সময় মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে বাধ্য হন। এতে মুখ খোলা থাকে এবং লালা বেরিয়ে আসে।

 * গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD): অ্যাসিড রিফ্লাক্সের কারণে ঢোক গিলতে অসুবিধা হতে পারে, যা অতিরিক্ত লালা তৈরির কারণ হতে পারে।

 * নির্দিষ্ট কিছু ঔষধ: কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে অতিরিক্ত লালা উৎপাদন হতে পারে। যেমন: কিছু অ্যান্টিসাইকোটিক এবং অ্যালঝাইমার রোগের ঔষধ।

 * ডায়েট: অ্যাসিডিক খাবার লালা উৎপাদন বাড়াতে পারে।

 * কৃমির প্রভাব: কিছু ক্ষেত্রে কৃমির কারণেও এই সমস্যা হতে পারে।

 * ঘুমের অভাব/অতিরিক্ত ক্লান্তি: শরীরের অতিরিক্ত ক্লান্তি বা মস্তিষ্কের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে মস্তিষ্ক ভুল সংকেত পাঠাতে পারে, যার ফলে মুখে লালা বেড়ে যেতে পারে।

কিছু রোগের লক্ষণ হিসেবে লালা পড়া:

কিছু ক্ষেত্রে ঘুমের সময় অতিরিক্ত লালা পড়া কিছু গুরুতর রোগের লক্ষণ হতে পারে। এ ধরনের ক্ষেত্রে সাধারণত অন্যান্য উপসর্গও থাকে। এর মধ্যে রয়েছে:

 * স্নায়বিক রোগ: স্ট্রোক, সেরিব্রাল পালসি, পারকিনসন রোগ, অ্যামায়োট্রফিক ল্যাটেরাল স্ক্লেরোসিস (ALS), মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (MS), ডাউন সিনড্রোম, অটিজম - এই রোগগুলোতে গিলতে অসুবিধা হয় বা মুখের পেশী নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়, ফলে লালা পড়তে পারে।

 * গিলতে অসুবিধা (ডিসফ্যাগিয়া): যেকোনো কারণে গিলতে সমস্যা হলে লালা মুখেই জমা হয় এবং বাইরে চলে আসে।

 * স্লিপ অ্যাপনিয়া: এই ঘুমের ব্যাধিতে ঘুমের সময় শ্বাস-প্রশ্বাস সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এতে মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার প্রবণতা বাড়ে এবং লালা পড়ে। এর অন্যান্য লক্ষণগুলো হলো উচ্চ শব্দে নাক ডাকা, ঘন ঘন ঘুম ভাঙা, সকালে মাথাব্যথা এবং দিনের বেলায় ক্লান্তি।

 * মুখের সংক্রমণ বা দাঁতের সমস্যা: গলার প্রদাহ, দাঁতের ক্ষয়, মুখের আলসার ইত্যাদির কারণেও লালা পড়তে পারে।

 * টনসিলের সংক্রমণ (টনসিলাইটিস) বা ফেরিনজাইটিস (গলার প্রদাহ)।

 * কিছু ধরণের ক্যান্সার: বিশেষ করে যে ক্যান্সারগুলো গলা বা মুখের পেশী বা স্নায়ুকে প্রভাবিত করে।

কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন?

যদি আপনার ঘুমের সময় অতিরিক্ত লালা পড়া নিয়ে আপনি চিন্তিত থাকেন, অথবা যদি এর সাথে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো থাকে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত:

 * লালা পড়ার কারণে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে।

 * মুখের চারপাশে ত্বক ফেটে যাওয়া বা চুলকানি হয়।

 * ঢোক গিলতে অসুবিধা হয়।

 * নাক ডাকা বা শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যায়।

 * কথা বলতে সমস্যা হয়।

 * শরীর দুর্বল লাগে বা ভারসাম্যহীনতা দেখা যায়।

একজন ডাক্তার আপনার লক্ষণগুলো পর্যালোচনা করে কারণ নির্ণয় করতে এবং সঠিক চিকিৎসার পরামর্শ দিতে পারবেন।


Countdown Timer

Post a Comment

Previous Post Next Post